Header Ads

বাংলা ব্যাকরণ শব্দের শ্রেণি বিভাগ

 


ইউরেনাস টিচিং হোম

বাংলা ভাষার ব্যাকরণ

শব্দের শ্রেণিবিভাগ

বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে শব্দের শ্রেণিবিভাগ হতে পারে।

       . গঠনমূলক শ্রেণিবিভাগ : () মৌলিক () সাধিত

       . অর্থমূলক শ্রেণিবিভাগ : () যৌগিক, () রূঢ়ি এবং () যোগরূঢ়

       . উৎসমূলক শ্রেণিবিভাগ : () তৎসম, () অর্ধ-তৎসম () তদ্ভব () দেশি () বিদেশি।

. গঠনমূলক শ্রেণিবিভাগ . মৌলিক শব্দ : যেসব শব্দ বিশ্লেষণ করা যায় না বা ভেঙে আলাদা করা

যায় না, সেগুলোকে মৌলিক শব্দ বলে। যেমনগোলাপ, নাক, লাল, তিন

. সাধিত শব্দ : যেসব শব্দকে বিশ্লেষণ করা হলে আলাদা অর্থবোধক শব্দ পাওয়া যায়, সেগুলোকে

সাধিত শব্দ বলে। সাধারণত একাধিক শব্দের সমাস হয়ে কিংবা প্রত্যয় বা উপসর্গ যোগ হয়ে সাধিত শব্দ গঠিত হয়ে থাকে। উদাহরণ : চাঁদমুখ (চাঁদের মতো মুখ), নীলাকাশ (নীল যে আকাশ), ডুবুরি (ডুবৃ+উরি) , চলন্ত (চল্ + অন্ত), প্রশাসন (প্র+শাসন), গরমিল (গর+মিল) ইত্যাদি

. অর্থমূলক শ্রেণিবিভাগ অর্থগতভাবে শব্দসমূহ তিন ভাগে বিভক্ত। যথা

. যৌগিক শব্দ . রূঢ় বা রূঢ়ি শব্দ। . যোগরূঢ় শব্দ

. যৌগিক শব্দ : যে সকল শব্দের ব্যুৎপত্তিগত অর্থ ব্যবহারিক অর্থ একই রকম, সেগুলোকে যৌগিক শব্দ বলে। যেমন:         গায়ক = গৈ + ণক (অক) – অর্থ : গান করে যে।

                 কর্তব্য = কৃ + তব্যঅর্থ : যা করা উচিত।

                বাবুয়ানা = বাবু + আনাঅর্থ : বাবুর ভাব।

                মধুর = মধু + অর্থ : মধুর মতো মিষ্টি গুণযুক্ত।

                দৌহিত্র = দুহিতা+ষ্ণ্যঅর্থ : কন্যার পুত্র, নাতি। ctb- 2020/syl b - 2015

                চিকামারা = চিকা+মারাঅর্থ : দেওয়ালের লিখন।

খ. রূঢ়ি শব্দ : যে শব্দ প্রত্যয় বা উপসর্গযোগে মূল শব্দের অর্থের অনুগামী না হয়ে অন্য কোনো বিশিষ্ট অর্থ জ্ঞাপন করে, তাকে রূঢ়ি শব্দ বলে। যেমনহস্তী=হস্ত + ইন, অর্থ-হস্ত আছে যার; কিন্তু হস্তী বলতে একটি পশুকে বোঝায়। গবেষণা (গো+এষণা) অর্থ- গরু খোজা। বর্তমান অর্থ ব্যাপক অধ্যয়ন পর্যালোচনা

রকমবাঁশি - বাঁশ দিয়ে তৈরি যে কোনো বস্তু নয়, শব্দটি সুরের বিশেষ বাদ্যযন্ত্র, বিশেষ অর্থে প্রযুক্ত হয়।। তৈল - শুধু তিলজাত স্নেহ পদার্থ নয়, শব্দটি যে কোনো উদ্ভিজ্জ পদার্থজাত স্নেহ পদার্থকে বোঝায় যেমন বাদাম-তেল।। প্রবীণ - শব্দটির অর্থ হওয়া উচিত ছিল প্রকৃষ্ট রূপে বীণা বাজাতে পারেন যিনি। কিন্তু শব্দটি অভিজ্ঞতাসম্পন্ন বয়স্ক ব্যক্তিঅর্থে ব্যবহৃত হয়। সন্দেশ - শব্দ প্রত্যয়গত অর্থেসংবাদ' কিন্তু রূঢ়ি অর্থেমিষ্টান্ন বিশেষ'

. যোগরূঢ় শব্দ : সমাস নিষ্পন্ন যে সকল শব্দ সম্পূর্ণভাবে সমস্যমান পদসমূহের অনুগামী না হয়ে কোনো বিশিষ্ট অর্থ গ্রহণ করে, তাদের যোগরূঢ় শব্দ বলে। যেমনপঙ্কজপঙ্কে জন্মে যা (উপপদ তৎপুরুষ সমাস) শৈবাল, শালুক, পদ্মফুল প্রভৃতি নানাবিধ উদ্ভিদ পঙ্কে জন্মে থাকে। কিন্তুপঙ্কজশব্দটি একমাত্রপদ্মফুলঅর্থেই ব্যবহৃত হয়। তাই পঙ্কজ একটি যোগরূঢ় শব্দ। রাজপুত - ‘রাজার পুত্রঅর্থ পরিত্যাগ করে যোগরূঢ় শব্দ হিসেবে অর্থ হয়েছেজাতিবিশেষ। মহাযাত্রামহাসমারোহে যাত্রা অর্থ পরিত্যাগ করে যোগরূঢ় শব্দরূপে অর্থমৃত্যু। জলধি – ‘জল ধারণ করে এমনঅর্থ পরিত্যাগ করে একমাত্র সমুদ্রঅর্থেই ব্যবহৃত হয়।

. উৎসমূলক শ্রেণিবিভাগ

. তৎসম শব্দ : যেসব শব্দ সংস্কৃত ভাষা থেকে সোজাসুজি বাংলায় এসেছে এবং যাদের রূপ অপরিবর্তিত রয়েছে, সেসব শব্দকে বলা হয় তৎসম শব্দ তৎসম একটি পারিভাষিক শব্দ এর অর্থ (তৎ (তার)+ সম (সমান)]=তার সমান অর্থাৎ সংস্কৃত উদাহরণ : চন্দ্র, সূর্য, নক্ষত্র, ভবন, ধর্ম, পাত্র, মনুষ্য ইত্যাদি

. তদ্ভব শব্দ : যেসব শব্দের মূল সংস্কৃত ভাষায় পাওয়া যায়, কিন্তু ভাষার স্বাভাবিক বিবর্তন ধারায় প্রাকৃতের মাধ্যমে পরিবর্তিত হয়ে আধুনিক বাংলা ভাষায় স্থান করে নিয়েছে, সেসব শব্দকে বলা হয় তদ্ভব শব্দ তদ্ভব একটি পারিভাষিক শব্দ এর অর্থ, ‘তৎ’ (তার) থেকেভব’ (উৎপন্ন) যেমনসংস্কৃত-হস্ত, প্রাকৃত-হথ, তদ্ভব হাত সংস্কৃত-চর্মকার, প্রাকৃত-চআর, তদ্ভব-চামার ইত্যাদি এই তদ্ভব শব্দগুলোকে খাঁটি বাংলা শব্দও বলা হয়

. অর্ধ-তৎসম শব্দ : বাংলা ভাষায় কিছু সংস্কৃত শব্দ কিঞ্চিৎ পরিবর্তিত আকারে ব্যবহৃত হয়। এগুলোকে বলে অর্ধ-তৎসম শব্দ। তৎসম মানে সংস্কৃত। আর অর্ধ তৎসম মানে আধা সংস্কৃত। উদাহরণ : জ্যোছনা, ছেরাদ্দ, গিন্নী, বোষ্টম, কুচ্ছিত- শব্দগুলো যথাক্রমে সংস্কৃত জ্যোৎস্না, শ্রাদ্ধ, গৃহিণী, বৈষ্ণব, কুৎসিত শব্দ থেকে আগত।

. দেশি শব্দ : বাংলাদেশের আদিম অধিবাসীদের (যেমন : কোল, মুণ্ডা প্রভৃতি) ভাষা সংস্কৃতির কিছু কিছু উপাদান বাংলায় রক্ষিত রয়েছে। এসব শব্দকে দেশি শব্দ নামে অভিহিত করা হয়। অনেক সময় এসব শব্দের মূল নির্ধারণ করা যায় না; কিন্তু কোন ভাষা থেকে এসেছে তার হদিস মেলে। যেমনকুড়ি (বিশ) কোলভাষা, পেট (উদর)–তামিল ভাষা, চুলা (উনুন)—মুণ্ডারী ভাষা। এরূপ-কুলা, গঞ্জ, চোঙ্গা, টোপর, ডাব, ডাগর, টেকি ইত্যাদি আরও বহু দেশি শব্দ বাংলায় ব্যবহৃত হয়

. বিদেশি শব্দ : রাজনৈতিক, ধর্মীয়, সংস্কৃতিগত বাণিজ্যিক কারণে বাংলাদেশে আগত বিভিন্ন ভাষাভাষী মানুষের বহু শব্দ বাংলায় এসে স্থান করে নিয়েছে এসব শব্দকে বলা হয় বিদেশি শব্দ এসব বিদেশি শব্দের মধ্যে আরবি, ফারসি এবং ইংরেজি শব্দই বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য সে কালের সমাজ জীবনের প্রয়োজনীয় উপকরণরূপে বিদেশি শব্দ দেশের ভাষায় গৃহীত হয়েছে এছাড়া পর্তুগিজ, ফরাসি, ওলন্দাজ, তুর্কি এসব ভাষারও কিছু শব্দ একইভাবে বাংলা ভাষায় এসে গেছে আমাদের পার্শ্ববর্তী ভারত, মায়ানমার (বার্মা), মালয়, চীন, জাপান প্রভৃতি দেশেরও কিছু শব্দ আমাদের ভাষায় প্রচলিত রয়েছে

. আরবি শব্দ : বাংলায় ব্যবহৃত আরবি শব্দগুলোকে দুটি প্রধান ভাগে ভাগ করা যায়

() ধর্মসংক্রান্ত শব্দ : আল্লাহ, ইসলাম, ঈমান, ওজু, কোরবানি, কুরআন, কিয়ামত, গোসল, জান্নাত, জাহান্নাম, তওবা, তসবি, জাকাত, হজ, হাদিস, হারাম, হালাল ইত্যাদি।

() প্রশাসনিক সাংস্কৃতিক শব্দ : আদালত, আলেম, ইনসান, ঈদ, উকিল, ওজর, এজলাস, এলেম, কানুন, কলম, কিতাব, কেচ্ছা, খারিজ, গায়েব, দোয়াত, নগদ, বাকি, মহকুমা, মুন্সেফ, মোক্তার, রায় ইত্যাদি

. ফারসি শব্দ : বাংলা ভাষায় আগত ফারসি শব্দগুলোকে আমরা তিন ভাগে ভাগ করতে পারি।।

() ধর্মসংক্রান্ত শব্দ : খোদা, গুনাহ, দোজখ, নামাজ, পয়গম্বর, ফেরেশতা, বেহেশত, রোজা ইত্যাদি।

() প্রশাসনিক সাংস্কৃতিক শব্দ : কারখানা, চশমা, জবানবন্দি, তারিখ, তোশক, দফতর, দরবার, | দোকান, দস্তখত, দৌলত, নালিশ, বাদশাহ, বান্দা, বেগম, মেথর, রসদ ইত্যাদি।

() বিবিধ শব্দ : আদমি, আমদানি, জানোয়ার, জিন্দা, নমুনা, বদমাশ, রফতানি, হাঙ্গামা ইত্যাদি

. ইংরেজি শব্দ : ইংরেজি শব্দ দুই প্রকারের পাওয়া যায়

() অনেকটা ইংরেজি উচ্চারণে : ইউনিভার্সিটি, ইউনিয়ন, কলেজ, টিন, নভেল, নোট, পাউডার, পেন্সিল, ব্যাগ, ফুটবল, মাস্টার, লাইব্রেরি, ফুল ইত্যাদি।

() পরিবর্তিত উচ্চারণে : আফিম (Opium), অফিস (Office), ইসকুল (School), বাক্স (Box),

হাসপাতাল (Hospital), বোতল (Bottle) ইত্যাদি

. ইংরেজি ছাড়া অন্যান্য ইউরোপীয় ভাষার শব্দ |

() পর্তুগিজ : আনারস, আলপিন, আলমারি, গির্জা, গুদাম, চাবি, পাউরুটি, পাদ্রি, বালতি ইত্যাদি

() ফরাসি : কার্তুজ, কুপন, ডিপো, রেস্তোরাঁ ইত্যাদি। |

() ওলন্দাজ : ইস্কাপন, টেক্কা, তুরুপ, রুইতন, হরতন ইত্যাদি

. অন্যান্য ভাষার শব্দ

() গুজরাটি : খদ্দর, হরতাল ইত্যাদি।

() পাঞ্জাবি : চাহিদা, শিখ ইত্যাদি।

() তুর্কি : চাকর, চাকু, তোপ, দারোগা ইত্যাদি।

() চিনা : চা, চিনি ইত্যাদি।

() মায়ানমার (বার্মিজ) : ফুঙ্গি, লুঙ্গি ইত্যাদি।

() জাপানি : রিক্সা, হারিকিরি ইত্যাদি

মিশ্র শব্দ : কোনো কোনো সময় দেশি বিদেশি শব্দের মিলনে শব্দদ্বৈত সৃষ্টি হয়ে থাকে যেমনরাজাবাদশা (তৎসম+ফারসি), হাট-বাজার (বাংলা+ফারসি), হেড-মৌলভি (ইংরেজি+ফারসি), হেড-পণ্ডিত (ইংরেজি+তৎসম) খ্রিষ্টাব্দ (ইংরেজি+তৎসম), ডাক্তার-খানা (ইংরেজি+ফারসি), পকেটমার (ইংরেজি+বাংলা), চৌহদ্দি (ফারসি+আরবি)

K.M AHSAN HABIB

No comments

Powered by Blogger.